
ময়মনসিংহ বাংলাদেশের একটি প্রচীনতম জেলা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনমলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রহ দমনের জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭ খ্রিস্ট্রাব্দের ১ মে তারিখে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। আদি ময়মনসিঙ্ঘ জেলার বিভিন্ন স্থান একে-একে সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে। ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে জামালপুর, ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল ও ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে নেত্রকোনা মহকুমা গঠিত হয়। পরে সব ক-টি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। বর্তমানে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছয়টি জেলা নিয়ে গঠিতঃ ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ।
হাওর জঙ্গল মহিষের সিং এই তিনে ময়মনসিংহ । পাট-ধান-গান-এর অতুলনীয় ঐতিহ্য নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই ময়মনসিংহ উপমহাদেশের এক মনোরম অঞ্চল। বিরই চালের অনন্য স্বাদ, সোনালি আশ, নানান বৈচিত্রময় ফসল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মহুয়া-মলুয়ার বিস্ময়কর লোকগাতা, পরিশীলিত সংগীতের ভুবন, শিল্প, সংস্কৃতি ও শিশু সাহিত্য, সর্বোপরি, বিশ্ববিশ্রুত কাব্যগাতা ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ নিয়ে সমগ্রতার এক বিশাল আধার ময়মনসিংহ।
মোগল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন। তার নামেই মধ্যযুগে, এই অঞ্চলের নাম হয় মোমেনশাহী। ‘ময়মনসিংহ’ নামটি ‘মোমেনশাহী-র’ পরিবর্তিত রূপ। দিল্লির সম্রাট আকাবরের সময় এ-এলাকার নাম ‘মোমেনশাহী, ছিল বলে ‘ আইন-ই-আকবরি’ নামক গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে। এ- ‘মোমেনশাহি’-ই উচ্চারণ, বর্ণ ও লিপি-বিড়ম্বনায় বর্তমানে ‘ময়মনসিংহ’ রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইংরেজদের উচ্চারণ-বিভ্রাটের ফলেই এ-নামকরণটির সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্তমানে তা-ই স্থায়ী হয়ে গেছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্থান আন্দোলন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- প্রতিষ্ঠায় ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর সাথে অনন্য ভূমিকা পালন করে ময়মনসিংহের কৃতী সন্তান ধনবাড়ীর জমিদার নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধূরী; এমনকি অর্থসংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্টা যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তখন নবার আলী তাঁর জমিদারের অংশবিশেষ বিক্রয় ও বন্ধক রেখে অর্থের সংস্থান করেছিলেন। তিনি অবিভক্ত বাংলার ৩ বার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
চট্টগ্রামে বসবাসরত বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিবাসীদের নিয়ে গঠিত একটি সম্পুর্ণ অরাজনৈতিক ও সেবামূলক সংগঠন ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, চট্টগ্রাম। এর উদ্দেশ্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিবাসীর সমন্বয়ে সকলের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। অভিন্ন এই প্লাটফর্মে দাড়িয়ে আমারা আমাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে চাই। আনন্দ-বেদনায় আমরা একে অপরের পাশে দাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম থেকে আমরা শুধু নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেই দায়িত্ব শেষ করতে চাই না ; বরং চট্টগ্রমে এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ -সহ সমগ্র বাংলাদেশেই শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক কার্জকর্মে নিজেদের ব্যাপৃত রাখতে চাই। আমরা দৃড়ভাবে বলতে চাই, পারস্পরিক সহযোগিত, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি-বন্ধনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ‘ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি,চট্টগ্রাম’ এক অনুকরণীয় আদর্শ স্থাপন করতে পারে।
বর্তমানে বৃহত্তর ‘ময়মনসিংহ সমিতি চট্টগ্রাম’ এর জন্য একটি স্থায়ী কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সমিতির ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। সমিতির চলমান কার্যক্রম হচ্ছে রক্তদান কর্মসূচি, ফ্রি চিকিৎসা ব্যবস্থা, সকল সদস্যের জন্য বিভিন্ন শপিংমল ও রেস্টুরেন্ট-রেস্তুরায় ডিসকাউন্ট কার্ড প্রদান, আজীবন সদস্যদের জন্য সনদ প্রদান, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি,চট্টগ্রাম’ – এর স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার সংযোগ, সমিতির রজতজয়ন্তী উদযাপন, ইফতার পার্টির আয়োজন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ দিবস উদযাপন, বনভোজন, বিভিন্ন গুনিজন ও কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা প্রদান, দুস্থ-অসহায় ও শীতার্থ মানুষদের সহযোগিতা প্রদান।